হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ। বেদ শব্দের অর্থ হলো জ্ঞান। বৈদিক যুগে মানুষের চিন্তাভাবনা, দেব-দেবী, ঈশ্বরের ধারণা প্রভৃতি স্থান পেয়েছে বেদে। প্রাচীনকালে জ্ঞানী ব্যক্তিদের বলা হতো ঋষি। এই ঋষিরা ধ্যান করতেন। সাধনা করতেন। এই ধ্যান ও সাধনা থেকে তাঁরা অনেক জ্ঞান অর্জন করেন। এই জ্ঞানের কথা আছে বেদে। বেদে অনেক দেব-দেবীর কথা আছে। এঁদের বলা হয় বৈদিক দেবতা। দেবতাদের মধ্যে আছেন অগ্নি, ইন্দ্র, বায়ু, উষা, সরস্বতী প্রভৃতি।
বেদ প্রথমে অবিভক্ত ছিল। পরবর্তীকালে মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদকে চারভাগে বিভক্ত করেন। যথা— ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ ও অথর্ববেদ। বেদকে বিভক্ত করেছেন বলে মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়নকে বেদব্যাসও বলা হয়ে থাকে। চার বেদের একেকটি ভাগকে সংহিতা বলে।
ঋক্ মানে মন্ত্র। ঋগ্বেদে ঈশ্বরের প্রাকৃতিক সত্তার শক্তিরূপে অনেক দেব-দেবীর গুণকীর্তন বা প্রশংসা ও প্রার্থনামূলক মন্ত্র রয়েছে। মন্ত্রগুলো পদ্যে বা ছন্দে রচিত এক ধরনের কবিতা। মূলত দেব-দেবীর গুণকীর্তন বা প্রশংসামূলক মন্ত্রের সংগ্রহই হলো ঋগ্বেদ। ঋগ্বেদের ঋষিদের মধ্যে বিশ্বামিত্র, মধুছন্দা, বামদেব, গার্গী, ঘোষা, মৈত্রেয়ী প্রমুখ বিখ্যাত।
সাম মানে গান। যে মন্ত্র সুর দিয়ে গানের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় তাকেই বলা হয় সাম। যে বেদে এ ধরনের মন্ত্র স্থান পেয়েছে তা সামবেদ। সামবেদের অধিকাংশ মন্ত্র ঋগ্বেদ সংহিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
ঋক্ ও সাম ব্যতীত অবশিষ্ট বেদমন্ত্রসমূহই যজুঃ নামে পরিচিত। যজুঃ মানে যজ্ঞ। যজ্ঞের অধিকাংশ নিয়ম এবং কার্যপ্রণালী যজুর্বেদে বর্ণিত হয়েছে। যজ্ঞের সঙ্গে যে বেদের মন্ত্রের গভীর সম্পর্ক তা-ই যজুর্বেদ। যজুর্বেদের মন্ত্রসমূহ গদ্য ও পদ্যে রচিত। এটি কৃষ্ণ যজুর্বেদ ও শুক্ল যজুর্বেদ নামে দুই ভাগে বিভক্ত।
বেদের চতুর্থভাগ হচ্ছে অথর্ববেদ। অথর্ববেদকে প্রাচীন চিকিৎসা বিজ্ঞানের উৎস বলা যায়। এখানে নানা প্রকার রোগব্যাধি এবং সেগুলো প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। রোগ নিরাময়ের উপায়স্বরূপ নানাপ্রকার বৃক্ষ, লতা-পাতা, গুল্ম প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আয়ুর্বেদ নামক যে চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে তারও আদি উৎস এই অথর্ববেদ। এ ছাড়া অস্থিবিদ্যা, বাস্তুবিদ্যা, শল্যবিদ্যা প্রভৃতি সম্পর্কে এ বেদে উল্লেখ রয়েছে।
আরও দেখুন...